তিন দিনে মোট ৮ হাজার ৩০০ টন ভারতীয় পেঁয়াজ দেশে এসেছে। এতে রাজধানীসহ সারাদেশের পাইকারি বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। পেঁয়াজ সর্বনিম্ন ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে এখনও বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৭০ টাকায়। ফলে এখনো পণ্য কিনতে ক্রেতাকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে
বুধবার কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তিন দিনে মোট ৪৭৩,০০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দেশে পেঁয়াজ এসেছে ৮ হাজার ৩০০ টন। স্থলবন্দর দিয়ে আরও পেঁয়াজ প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। আর এরই মধ্যে পণ্যটির দাম অর্ধেক কমেছে।
রাজধানীর সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ আমদানিকারক ও পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শংকর চন্দ্র দাস যুগান্তরকে বলেন, দেশে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে কমতে শুরু করেছে। বুধবার পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজি। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৪০ টাকা কেজি।
তিনি বলেন, আমদানি আদেশ আসবে এমন খবরে দেশের স্থলবন্দরজুড়ে ট্রাক অপেক্ষা করছে। অর্ডার দিতে দেরি হওয়ায় পেঁয়াজ ট্রাকে ছিল। গরমে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে। কিন্তু খুচরা বাজারে সেই অনুপাত কমেনি।
এদিন রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। নয়াবাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. জামিল বলেন, যারা এখনো খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন তারা বেশি দামে এই পণ্য কিনছেন। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুনের চেয়ে কম দামে কিনতে পারলে কম দামে বিক্রি হবে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে। খাতুনগঞ্জে ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজের আগমনে দাম আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন পাইকারি বাজারে ভালো মানের ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। কিছুটা নিম্নমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। তবে খুচরা বাজারে এখনো প্রভাব পড়েনি। খুচরা বাজারে দাম কয়েকদিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে কমবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বুধবার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন পাইকারি গুদাম ঘুরে দেখা গেছে, সকালের পর থেকে ভারত থেকে আসা পেঁয়াজ ট্রাকে করে খাতুনগঞ্জের গুদামে ঢুকতে শুরু করেছে। এছাড়া আড়তে দেশি পেঁয়াজের বড় মজুদ রয়েছে। এ অবস্থায় পেঁয়াজের দাম অনেক কমে গেছে। বিকাল থেকে এই দাম আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দেশি পেঁয়াজ এখন পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি। তবে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম এখনো ৭০ টাকার বেশি।
এদিকে পেঁয়াজের বাজার এখনো পুরোপুরি চাঙ্গা হয়নি। পাইকারি বাজারে কেজিতে ৩০ টাকা কমানোর পরও পেঁয়াজের ক্রেতা পাচ্ছেন না ক্রেতারা। বিক্রি খুবই স্থবির। ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি। তবে পেঁয়াজের আমদানি আরও কমবে। এ আশঙ্কায় দাম কমলেও পেঁয়াজ বিক্রির চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। আরও কমার আশায় আপাতত পেঁয়াজ কিনছেন না ক্রেতারা। কয়েকদিন পর আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে আসবে, পেঁয়াজের দাম আরও কমবে এবং বাজারও মজবুত হবে।
আমদানির অনুমতি পাওয়ার পর থেকে পাবনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়ায় কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে খাতুনগঞ্জেও। ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করলে দাম আগের স্তরে নেমে আসবে।
খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান, আমদানি শুরু হওয়ায় পেঁয়াজের দাম অনেকটাই কমেছে। এদিকে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বেনাপোল ও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চট্টগ্রামের বাজারে আসতে শুরু করেছে। ফলে আগের মজুদকৃত পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কমেছে।
0 coment rios: